পৃষ্ঠাসমূহ

এপ্রিল ২১, ২০১১

রত্না থেকে শাবানা

ঢাকার ছবিতে ১৯৬২ সালে অতিরিক্ত শিল্পী হিসেবে শাবানার আত্মপ্রকাশ ‘রত্না’ নামে। তখন তার বয়স ছিল এগারো কি বারো। ১৯৬৬ সালে উর্দু ছবি চকোরীতে রত্না থেকে তিনি হলেন ‘শাবানা’। ১৯৭০ পর্যন্ত উর্দু ও বাংলা এবং ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত কয়েকশ’ বাংলা ছবির নায়িকা ও কেন্দ্রীয় চরিত্রে শাবানা অভিনয় করেছিলেন। ফয়েজ চৌধুরী তার মেয়ে রত্নাকে নিয়ে প্রায়ই এফডিসিতে আসতেন। এহতেশাম তখন ‘নতুন সুর’ নামে একটি ছবির কাজ নিয়েছেন। সেটা ছিল ১৯৬১ সালের কথা। একজন শিশু শিল্পী দরকার—রত্নাকে দেখে এহতেশাম পছন্দ করলেন। এভাবেই ‘নতুন সুর’ ছবিতে প্রথম অভিনয় জীবন শুরু হলো তার। তবে এরও অনেক পরে ১৯৬৬ সালে ‘চকোরী’ ছবি থেকে রত্না নাম পাল্টে তার নাম রাখা হলো শাবানা। ‘শাবানা’ নামটি দিলেন এহতেশাম নিজেই। শাবানার আসল নাম ছিল আফরোজা সুলতানা। পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে। জন্ম ১৯৫০ সালে। নায়িকা হওয়ার আগে শাবানা শিশু অভিনেত্রী হিসেবে তালাশ, সাগর, ভাইয়া ছবিতে অভিনয় করেন। নায়িকা হিসেবে তার অভিনয় শুরু ‘আবার বনবাসে রূপবান’ ছবিতে (১৯৬৬)। ওই ছবিতে সোনাভানের ভূমিকায় ছিলেন তিনি। তার নায়ক ছিলেন কাসেম। ‘চকোরী’ ছবিতে কাজ করার আগে ‘জংলী মেয়ে’ ছবির কাজ শুরু করেন তিনি। ‘জংলী মেয়ে’ ছবিতে তার নায়ক ছিলেন আজিম। ‘চকোরী’ও মুক্তি পায় ১৯৬৭ সালে। নায়ক ছিলেন নাদিম। এই ছবিতে শাবানা ও নাদিমের অসম্ভব নাম হয়েছিল। ১৯৬৮ সালে নায়িকা হিসেবে চাঁদ আওর চাঁদনী, ভাগ্যচক্র ও কুলীতে; ১৯৬৯ সালে দাগ, মুক্তি; ১৯৭০ সালে পায়েল, সমাপ্তি, ছদ্মবেশী, বাবুল, মধুমিলন এবং একই অঙ্গে এত রূপ ছবিতে অভিনয় করেন। স্বাধীনতার পরপর ১৯৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি ‘ওরা এগারোজন’-এ অভিনয় করেন শাবানা। ওই বছরই ‘অবুঝ মন’ ছবিতে অভিনয় করে সারাদেশে অসম্ভব খ্যাতি পেলেন। ১৯৭২ সালে এ দুটি ছবিসহ তার আরও ৬টি ছবি রিলিজ হয়। এ ছবিগুলো হলো—সমাধান, ছন্দ হারিয়ে গেল, এরাও মানুষ, মুন্না আওর বিজলী, চৌধুরী বাড়ী আর স্বীকৃতি। ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে কয়েকটি হলো—ফকির মজনু শাহ, চাষার মেয়ে, উত্সর্গ, মায়ার বাঁধন, আগুন, সোহাগ, মাটির ঘর, বধূ বিদায়, দুই পয়সার আলতা, লালুভুলু, ভাত দে, লাল কাজল প্রভৃতি। পাকিস্তান আমলে উর্দু ছবিতে নাদিমের সঙ্গে অভিনয় করে সফল হয়েছিলেন এই শাবানা। রাজ্জাক, ওয়াসিম, আলমগীর এরাও শাবানার নায়ক ছিলেন। শাবানা একবার জানিয়েছিলেন, রাজ্জাক ও আমি জুটি হিসেবে যখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে ঠিক তখনই আলমগীরের সঙ্গে জুটিবদ্ধ হলাম। সামাজিক ছবিতে আমরা সফল হয়েছিলাম। আমার ক্যারিয়ার গঠনে অনেক পরিচালকের অবদান রয়েছে। এহতেশাম চাচা যদি সুযোগ না দিতেন তাহলে হয়তো ‘শাবানা’ হতে পারতাম না। সামাজিক চরিত্রে নতুন ইমেজে আমাকে পরিচিত করার ব্যাপারে কাজী জহির, মমতাজ আলী, কামাল আহমেদ-এর অবদান কোনো দিন মন থেকে সরে যাবে না। ১৯৬৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত শাবানা ঢাকার ফিল্মে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি কয়েকশ’ ছবির নায়িকা ছিলেন। পোশাকী, সামাজিক, অ্যাকশন সব ছবিতেই তিনি সফল হয়েছিলেন। তার অভিনীত উল্লেম্লখযোগ্য ছবির তালিকায় রয়েছে—চকোরী (১৯৬৭), জংলী মেয়ে (১৯৬৭), চাঁদ আওর চাঁদনী (১৯৬৭), কুলি (১৯৬৮), পায়েল (১৯৬৯), ছদ্মবেশী (১৯৭০), একই অঙ্গে এত রূপ (১৯৭০), ওরা এগারোজন (১৯৭২), মুন্না আওর বিজলী (১৯৭২), অবুঝ মন (১৯৭২), দস্যুরানী (১৯৭৩), মালকা বানু (১৯৭৪), দুই রাজকুমার (১৯৭৫), অনেক প্রেম অনেক জ্বালা (১৯৭৫), জীবন সাথী (১৯৭৬), রাজ দুলারী (১৯৭৮), বধূ বিদায় (১৯৭৮), কাপুরুষ (১৯৭৮), ফকির মজনু শাহ (১৯৭৮), আয়না (১৯৭৯), চোখের মণি (১৯৭৯), বিজয়িনী সোনাভান (১৯৭৯), সাথী তুমি কার (১৯৮০), দুই পয়সার আলতা (১৯৮২), লাল কাজল (১৯৮২), বানজারান (১৯৮৩), মরণের পরে (১৯৮৯), কাজের বেটি রহিমা (১৯৯১), স্বামীর আদেশ (১৯৯১), অন্ধ বিশ্বাস (১৯৯২) প্রভৃতি। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা অবস্থায় শাবানা চলচ্চিত্র জগত থেকে বিদায় নিয়ে স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে আমেরিকায় চলে যান। তা প্রায় ১৮ বছর হয়ে এল। তবুও শাবানা নামটি এখন পর্যন্ত দর্শকের মুখে মুখে থেকে গেল। আর এ জন্যই শাবানা ঢাকার ফিল্মে কিংবদন্তি হয়ে থাকবেন।