পৃষ্ঠাসমূহ

এপ্রিল ১৮, ২০১১

হলিউডের তারকা সোফিয়া লরেন

সোফিয়া অভিনেত্রী হয়েছিলেন, পাশাপাশি তাকে হতে হয়েছিল সেক্স সিম্বলও। তাই বোধহয় সার্থক অভিনেত্রীর পাশাপাশি প্লে গার্লের ইমেজও তাকে বয়ে বেড়াতে হয় এখনও। সোফিয়া লরেনের জন্ম ১৯৩৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ইতালির রোমের এক অখ্যাত পরিবারে। তার কৈশোর জীবন কেটেছিল নেপলস শহরের উপকণ্ঠে নানার বাড়িতে। ছোটবেলায় তার চেহারা খুব সুন্দর ছিল না। একেবারে বিশ্রী অর্থাত্ কুিসত। তার ওপর হাত-পাগুলো ছিল ভীষণ লম্বা। অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় থেকে তার অবস্থা এমনি হয়েছিল। ১২ বছর বয়স পূর্ণ হতেই তার সারা শরীরে আসে সৌন্দর্যের জোয়ার। এর পেছনে কাজ করেছিল প্রতিদিন শরীরের প্রতি যত্ন নেয়া। শরীর আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য অল্প বয়স থেকেই তিনি নিয়মিত ব্যায়াম শুরু করেছিলেন। সোফিয়া লরেন ইতালিতে এবং হলিউডে দু’জায়গাতেই ছবি করেছেন। ১৯৫১ সাল থেকে সিনেমায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। এ পর্যন্ত তার ছবির সংখ্যা ষাটের বেশি হবে না। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে—ও ম্যান অব দ্য রিভার, ‘দ্য কি’, ‘দ্যাট কাইন্ড অব ওম্যান’, ‘হেলার ইন পিংক টাইটস’, ‘টু উইমেন’, ‘বোক্কাচ্চিয়ো ৭০’, ‘ইয়েস্টারডে’, ‘টুডে’, ‘টুমরো’, ‘ম্যারেজ ইটালিয়ান স্টাইল’, ‘সান ফ্লাওয়ার’, ‘আ কাউন্টেস ফ্রম হংকং’, ‘আঞ্জেলা’, ‘রানিং অ্যাওয়ে’ প্রভৃতি। সোফিয়া লরেন ১৯৯১ সালে সম্মানসূচক অস্কার পেয়েছেন। ১৯৯৪ সালে বার্লিন চলচ্চিত্র উত্সবে তার সামগ্রিক চলচ্চিত্র কর্মের জন্য তাকে সম্মানিত করা হয়। অভিনেতা ক্যারি গ্রান্টের সঙ্গে এক সময় প্রেম করেছেন। তবে বিয়ে করেছেন প্রযোজক কার্লো পন্টিকে। সেই সোফিয়া লরেন ছবি করা ছেড়ে দিয়েছেন অনেক আগেই। ১৯৪৬ সালে রোমে চিত্রায়িত ‘কুদ ভাদিস’ নামে একটি ছবিতে সোফিয়া প্রথম অভিনয় করেছিলেন। অনেক কষ্টে এ ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলেন। ‘কুদ ভাদিস’-এ সোফিয়া এবং তার মা দু’জনে অভিনয় করে ছিয়াত্তর ডলার পেয়েছিলেন। সোফিয়ার জন্মের আগে তার মা রোমিলডা একজন পুরুষকে ভালোবাসতেন। সেই প্রেমিকের সঙ্গে মিলনের ফলেই রোমিলডা গর্ভবতী হন। লোকটি তাকে বিয়ে করতে আপত্তি জানায়। তার সন্তান যে ওই নারীর পেটে তা তিনি স্বীকার করলেন না। রোমিলডার গর্ভে জন্ম নিল এক সন্তান। ওই সন্তানের সামাজিক স্বীকৃতি ছিল না। দশের চোখে ছিল অবৈধ। সেই শিশুকন্যাই একদিন বড় হয়ে বিখ্যাত অভিনেত্রী হলেন। আর তিনিই তো সোফিয়া লরেন। সোফিয়ার মায়ের জীবন নিয়ে একটা ছবি তৈরি হয়। ছবির গল্পের প্রধান চরিত্র ছিল সোফিয়ার মা রোমিলডা। ‘রোমিলডা’ নামের এই ছবিতে সোফিয়া মা ও মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করে সাড়া জাগিয়েছিলেন। এই ছবি করা নিয়ে মায়ের সঙ্গে সোফিয়ার একটু মন কষাকষি ঘটেছিল। সোফিয়া লরেন প্রথমদিকে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতেন। উনিশ বছর বয়সে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন ‘টম্পি নক্সি’ ছবিতে। তারপর রোমে আরও কয়েকটি ছবি করার পর ১৯৫৬ সালে তার ডাক এলো আমেরিকার হলিউড থেকে। হলিউডের ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে তিনি প্রযোজক কার্লো পন্টির কাছ থেকে বেশ সহযোগিতা পেলেন। কার্লো পন্টি তার নিজের ছবি ‘আফ্রিকা আন্ডারশিট’-এ সর্বপ্রথম নায়িকা হিসেবে সোফিয়াকে নিলেন। এরপর একে একে আট কি দশটি ছবিতে অভিনয় করলেন। ‘ও ম্যান অব দ্য রিভার’ ছবি নির্মাণকালে এ ছবির প্রযোজক-পরিচালক কার্লো পন্টির প্রেমে পড়লেন সোফিয়া লরেন। ১৯৫৭ সালে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন। কার্লো পন্টি এর আগেও একবার বিয়ে করেছিলেন। সে ঘরে ১ ছেলে ও ১ মেয়ে ছিল। ‘ও ম্যান অব দ্য রিভার’ ছবির মাধ্যমেই সোফিয়া লরেন ১৯৫৫ সালে ইতালির সেরা অভিনেত্রীর সম্মান লাভ করেছিলেন। ‘আফ্রিকা আন্ডার দ্য সি’ ছবিতে অভিনয় করে তিনি ব্যাপক খ্যাতি পেয়েছিলেন। রাণী এলিজাবেথ এ ছবিটি দেখে এতই মুগ্ধ হলেন যে, তাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। ইতালির রোম ছেড়ে আমেরিকার হলিউডে যাওয়ার পর একেকটি ছবিতে অভিনয় করে তিনি ৮ লাখ ডলার করে পেতেন। পরে পারিশ্রমিক আরও বেড়ে গিয়েছিল। ভালো অভিনয় করা সত্ত্বেও চিত্র সমালোচকরা সোফিয়াকে দেহসর্বস্ব অভিনেত্রী বলেই গণ্য করতেন। তাদের মতে, সোফিয়ার স্বাস্থ্য সমুজ্জ্বল দেহই হলো তার জনপ্রিয়তার কারণ। কিন্তু ‘ডিপায়ার আন্ডার দ্য এলমস’ এবং ‘টু ও ম্যান’ ছবি দুটি মুক্তি পাওয়ার পর চিত্র সমালোচকদের মত পালটে গেল। ‘ক্যাসন্ডা ক্রেসিং’ এবং ‘সান ফ্লাওয়ার’ ছবি দুটির মাধ্যমে সোফিয়া লরেন বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পেলেন। সোফিয়া লরেন একটা সময় মনে করতেন, মহিলাদের আকর্ষণ বাড়ায় নারীত্ব আর যৌন আবেদন। সোফিয়া লরেন এক সময় হলিউডে অ্যাপার্টমেন্ট করে সেটেল্ড হয়ে যান। কিন্তু নিজ দেশ ইতালির কথা ভুলতে পারেননি বলে রোম শহরে একটা বাড়িও করেছিলেন। প্রতি বছর এক মাসের জন্য এসে সেই বাড়িতে থেকে গেছেন। এতটা সুন্দরী না হয়েও সোফিয়া লরেন চলচ্চিত্রে যোগ দিয়ে ঝড় তুলেছিলেন। মডেল গার্ল হিসেবেও তিনি বেশ এগিয়েছিলেন। তার অভিনীত ‘টু ও ম্যান’ এবং ‘সান ফ্লাওয়ার’ ছবি দুটি এক সময় ঢাকার অভিজাত প্রেক্ষাগৃহগুলোয় রিলিজ হয়েছিল। তখন এ ছবি দুটি দেখার জন্য দর্শকের প্রচণ্ড ভিড় জমেছিল প্রেক্ষাগৃহের সামনে। সে কথা কী ভোলার! তিনি হলিউডের ছবিতে অভিনয় করে রীতিমত হয়ে উঠেছিলেন কিংবদন্তির তারকা। তার ঐশ্বর্য-খ্যাতি এখনও যে ভোলার নয়।