পৃষ্ঠাসমূহ

এপ্রিল ১৪, ২০১১

হলিউডের প্রথম মহাতারকা গ্রেটা গার্বো

গ্রেটা গার্বোকে বলা হতো বিউটি অব দ্য বিউটি হলিউডের প্রথম দিকের জনপ্রিয় নায়িকা ছিলেন তিনিই গ্রেটা হঠাত্ করেই ১৯৪১ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে খ্যাতির শীর্ষে অবস্থানকালে চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নিয়ে জনজীবন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন তার অভিনীত শেষ ছবি ছিল ‘টু ফেসড ওম্যান’ বিখ্যাত এই নায়িকা ১৯৯০ সালের ১৫ এপ্রিল নিউইয়র্কের এক হাসপাতালে পরলোকগমন করেছিলেন তারপর ২১টি বছর পার হলো তবু কি চলচ্চিত্র দর্শকরা তার কথা ভোলতে পেরেছেন! ভোলতে না পারারই কথা আমেরিকায় মাঝেমধ্যে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে তার ছবি দেখানো হলে অনেকেই তা আগ্রহ নিয়ে দেখেন আজ যারা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা তারাও গ্রেটার প্রশংসা করেন নির্বাক চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত সারা দুনিয়ার সিনেমা দর্শকদের স্বপ্নের দেবী ছিলেন এই গ্রেটা গার্বো তার জন্ম ১৯০৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর, ইউরোপ মহাদেশের সুইডেনের স্টকহোমে তিনি ১৪ বছর বয়সে স্কুল ত্যাগ করেন এরপর তিনি ক্ষৌরকার দোকান ছাড়াও টুপি, চুলের ফিতা ইত্যাদি বিক্রির দোকানে কিছুদিন কাজ করেন হঠাত্ করেই একদিন সুইডিস ছবির পরিচালক এরিখ ফেসলারের চোখে ধরা পড়লেন গ্রেটা পরিচালক এই মেয়েটিকে পর্যন্দ করলেন এই পরিচালকের কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পান তিনি তার শৈশব জীবন কেটেছিল সুইডেনের স্টকহোমে বয়স যখন ১৭, তখন চিত্র পরিচালক মরিস স্টিলার তাকে হলিউডে নিয়ে যান গ্রেটা অপূর্ব সুন্দরী ১০০ বছরে এমন একজন সুন্দরী মেলে একদিন এ মেয়েটি পৃথিবীর সেরা অভিনেত্রী হবেই...” ঠিকই গ্রেটা গার্বো একদিন পৃথিবীর সেরা অভিনেত্রী হয়েছিলেন ১৯২৬ থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত ছিল তার অনুকূলে এ সময়ে তার অভিনীত ছবিগুলো হলো দি টরেন্টো (১৯২৬), ফ্লেশ এট দি ডেভিল (১৯২৭), দি ডেভিন ও ম্যান (১৯২৮), অ্যানা ক্রিশটাই (১৯৩০), রোমান্স (১৯৩০), মাতাহারি (১৯৩১), গ্র্যান্ড হোটেল (১৯৩২), কুইন কৃষ্টিন (১৯৩৩), দি রেইনটেড ডেইলি (১৯৩৪), অ্যানা কারেনইনা (১৯৩৫), ক্যামিলি (১৯৩৭), কনকোয়েস্ট (১৯৩৭), নোনোভস্কায় (১৯৩৯) প্রভৃতি ১৯২৭ সালে ‘ফ্লেশ অ্যান্ড ডেভিল’ ছবিতে গ্রেটা গার্বো জন গিলবার্টের সঙ্গে জুটি বেঁধে সারা বিশ্বের তরুণ দর্শকদের বুকে ঝড় তুলেছিলেন এ ছবির ‘লিও আর ফেলিসিটা’ দান্তে বিয়েত্রিচ, রোমিও জুলিয়েট, অ্যান্তনি ক্লিওপেট্রার মতো স্মরণীয় হয়ে থাকল এ ছবিতে অভিনয়কালে গ্রেটা গার্বো আর জন গিলবার্ট একে অপরের প্রেমে জড়িয়ে পড়লেন গিলবার্ট গ্রেটার নিঃসঙ্গ জীবনে প্রেমের জোয়ার আনলেন অনেক দিন রাতে গিলবার্টের টাওয়ার রোডের বাড়িতে গ্রেটা অতিথি হয়েছিলেন কিন্তু হঠাত্ করেই ওদের সম্পর্কটা ভেঙে গেল গ্রেটার জীবনে আরো কয়েকজন পুরুষ এসেছিলেন, এদের মধ্যে মরিস স্টিলার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গ্রেটাকে তিল তিল করে তৈরি করেছিলেন স্টিলার তিনিই গ্রেটাকে হলিউডে নিয়ে এসেছিলেন স্টিলার যখন শুনলেন, গ্রেটা গিলবার্টের সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করছেন, তখন তিনি লসএনঞ্জেলেস ছেড়ে সুইডেনের স্টকহোমে চলে যান কিছুদিন পরই এই স্টিলার এক হাসপাতালে মারা যান সম্ভবত এ কারণেই গ্রেটা গার্বো নীরবে বিদায় নিয়ে সঙ্গী করলেন নির্জনতাকে রিচার্ড শীল্ড, লিও কেন্ডি স্টোকে স্কি, সিসিন বীটনসহ অনেক খ্যাতনামা লোকদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তার কিন্তু জীবনে কাউকে স্বামী হিসেবে বেছে নিতে পারেননি বার বার প্রেমে জড়িয়েও গ্রেটা বিয়েতে রাজি হননি এ প্রসঙ্গে তিনি বরাবর একটা কথাই বলেছেন, ‘নিঃসঙ্গ জীবন যত কষ্টকর হোক না কেন, আমার কাছে তা অত্যন্ত মধুময়’ গ্রেটা গার্বো গোটা বিশ্বের উল্লেখযোগ্য স্থান ঘুরে দেখেছিলেন সেই যৌবনে আর বার্ধক্যে কখনও তিনি স্থায়ীভাবে কোনো আবাসস্থল গড়েননি কখনও সুইজারল্যান্ড, ইংল্যান্ড কখনও আমেরিকার নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন শহরে কিংবা ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাস করেছেন সারা বছর তিনি হোটেলে কিংবা ভাড়া করা বাড়িতে থেকেছেন মারা যাওয়ার কয়েক বছর আগেও তিনি সকালে নাস্তা খাওয়ার আগে একটানা প্রায় এক ঘণ্টা ব্যায়াম ও জগিং করতেন আর নিয়মিত দিনে কয়েক মাইল পথ হাঁটতেন শেষ জীবনে তিনি বহুবার বলেছেন : ‘অবচেতনভাবে আমি সর্বদা সুখের সন্ধান করেছি, কিন্তু সুখ কোথাও পাইনি সুখী জীবন অন্তত আমার জন্যে নয়’ হলিউডে তার ষোল বছরের চলচ্চিত্র জীবনে ১১ বার আবাসস্থল বদল করেছিলেন হলিউড ছেড়ে যাওয়ার পর গ্রেটা চলে গেলেন সুইডেনে সেখানে সাত কামরার এক অ্যাপার্টমেন্টে বহুদিন বসবাস করেছিলেন তখন কদাচিত্ ফ্ল্যাটের বাইরে পা রাখতেন চলচ্চিত্র লাইব্রেরিতে কিংবা পুরনো বন্ধুদের বাড়িতে গিয়ে সময় কাটাতেন গ্রীষ্মে চলে যেতেন সুইজারল্যান্ডের ক্লোসটার্সে নিজ বাড়িতে এ ভাবেই কেটে গেছে দশকের পর দশক; কিন্তু কখনই কোনো সাক্ষাত্কার দেননি কোনো সাংবাদিককে পত্রপত্রিকায় সাংবাদিকরা যা লিখেছিলেন তা বানিয়েই লিখতেন গ্রেটা তা পড়ে নীরবে হাসতেন গ্রেটার আসল নাম ছিল গ্রেটা লভিসা গুস্টাফসন একই সময় গ্রেটা কয়েকটি বিজ্ঞাপনে মডেল হন এমজিএম চিত্র প্রতিষ্ঠানের ‘দি টরেন্টো’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করে খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করলেন হলিউডের পত্রপত্রিকায় লেখা হলো : ‘রুপালি পর্দার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ দেবীদের অন্যতম নবাগতা গ্রেটা গার্বো অপূর্ব অভিনয় করেছেন